মহামান্য আদালতের রায় অবমাননা এবং আইন উপেদেষ্টা আসিফ নজরুল মতামত থাকা সত্বেও অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করা
রিপোর্টঃ- শাহজালাল (রাসেল)
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের অডিটরদের নিয়ে সিজিএ এর সবুজ চত্বরে গণ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর অধীন প্রধানত ২টা ডিপার্টমেন্ট যথা অডিট এবং একাউন্টস।
অডিট বিভাগের অধিন মোট ১৭টি অধিদপ্তর রয়েছে। একাউন্টস এর মধ্যে ৩টি ভাগ আছে।
(১) কন্ট্রোলার জেনারেল অব একাউন্টস (সিজিএ)।
(২) কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ); এবং
(৩) অতিরিক্ত মহাপরিচালকঃ (রেলওয়ে)।
নন-ক্যাডার পদ সোপান:
১। অডিটর (১১তম গ্রেড);
২। এসএএস সুপার (১০ম গ্রেড):
৩। অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার (৯ম গ্রেড)
অডিটর পদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবির ভিত্তিঃ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত সিভিল রিট পিটিশন নম্বর-৯৩৯৯/২০১৫ এর রায় ০২/০২/২০১৬ খ্রি. তারিখে প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ের আলোকে ২৩/১২/২০১৮ খ্রি. তারিখে রিট মামলার পক্ষভুক্ত ৬১ জন অডিটরকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
অতঃপর উক্ত মামলার পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য ৩টি কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করা হয় (কনটেম্পট পিটিশন নং-৭৫৯/২০১৯; ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১)। সকল রিট/কনটেম্পট পিটিশন এর রায় পিটিশনারদের পক্ষে আসলেও কর্তৃপক্ষ বা সিএজি অফিস অডিটর পদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে, ২৩/১২/২০১৮ খ্রি. তারিখ হতে একই পদে দুই ধরনের গ্রেড বিদ্যমান রয়েছে (রিট মামলার পক্ষভুক্ত ৬১ জনের ১০ম গ্রেড এবং অবশিষ্ট সকল অডিটরদের ১১তম গ্রেড); যা একাট বৈষম্য।
বর্তমান কার্যক্রম: উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে সিএজি কার্যালয় হতে ১২/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর মামলার পক্ষভুক্ত অডিটরগণসহ অডিটর পদ’কে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য সুপারিশসহ অনুরোধ করা হয়। ১৩/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখ অর্থ মন্ত্রণালয় হতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর ‘অডিটর পদ’ কে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে কিনা সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। আইন ও বিচার বিভাগ ২০/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখে মাননীয় আইন উপদেষ্টার স্বাক্ষরসহ অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যেতে পারে মর্মে সুপারিশসহ মতামত প্রদান করে। অতঃপর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আইন ও বিচার বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে পত্র প্রেরণ করা হলেও অদৃশ্য কারনে প্রায় ০৩ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ কর্তৃক অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সিএজি অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়, আমাদের কিছু করণীয় নেই।
ফলে, দীর্ঘদিনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দূর করার পদক্ষেপ থমকে আছে এবং অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মচারীগণের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘এটি কোন দাবি নয় বরং অধিকার’। এই অধিকার বাস্তবায়ন এর জন্য তারা সিজিএ এর সবুজ চত্বরে গত ১১/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখ হতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। সিএজি, সিজিএ এবং সিজিডিএফ ও এর বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসগুলোতে গত তিন দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছে। আজ ০৮ সেপটেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখ রোজ রবিবার “একই পদে দুই গ্রেডের বৈষম্য’ মহামান্য আদালতের রায় অবমাননা এবং মাননীয় আইন উপেদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল স্যারের মতামত থাকা সত্ত্বেও অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করায় সারা বাংলাদেশের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের অডিটরদের নিয়ে সিজিএ এর সবুজ চত্ত্বরে একটি গণসমাবেশ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
একই পদে দুইধরণের বেতন থাকাটাই আর্দশ কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না, এমন বিষয় কর্তৃপক্ষকেই নৈতিকভাবে এবং দায়িত্বশীল হয়ে সমাধান করা প্রয়োজন। অথচ সংবিধানের ১২৭ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয় যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারের আর্থিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে সেখানেই বছরের পর বছর এই সমস্যা বিদ্যমান। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে (স্পেশাল অরিজিনাল জুরিসডিকশন) দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং-৯৩৯৯/২০১৫ এর রায় গত ০২-০২-২০১৬ খ্রি. তারিখ সিএজি ও অধীনস্ত অফিসের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণী) এ উন্নীত করার পক্ষে রায় প্রদান করে, উক্ত আদেশের বিপরীতে লিভ টু আপীল ২৭১১/২০১৬ দায়ের করা হলে ১১/০২/২০১৮ খ্রি: তারিখে খারিজ হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এর স্মারক নং-৫৩৩, তারিখ: ২৩-১২-২০১৮ খ্রি. এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ৬১ জন মামলার পক্ষভুক্ত রিট পিটিশনারকে ১১তম হতে ১০ম গ্রেড এ উন্নীত করার আদেশ প্রদান করেন, যদিও আদালতের রায়ে কোন পক্ষভুক্তকে নয় বরং ‘পোস্ট অব দ্যা পিটিশনার’ এর কথা বলা হয়েছে। ফলে, অন্যন্য অডিটরগণ পরর্বতীতে ধারাবাহিক কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করতে থাকে এবং আদালত সব মামলাতেই অডিটর পদেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে রায় প্রদান করেন। কিভাবে একটি বিভাগের কর্মচারীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালতের দুয়ারে ঠেলে দেওয়া হলো তা কিছুতেই বোধগম্য নয়। যা কর্মচারীকে দিতেই হবে, তার জন্য দলে দলে আদালতে পাঠিয়ে বছরের পর বছর ঘুরে রায় নিয়ে এসে, কর্তৃপক্ষকে দিনের পর দিন অনুরোধ করে উচ্চতর গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করতে হবে? বিভাগে যারা নতুন নিয়োগ পাবে তারা নিয়োগের সাথে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার জন্য আলাদতের বারান্দায় যাবেন, যা ন্যায্যতা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের আর্দশের অন্তরায়।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার অংশে অনুচ্ছেদ ২৯(১) মোতাবেক সকল কর্মচারীর ন্যয় একজন অডিটর পদে নিয়োগ লাভে সমান সুযোগের অধিকার পাবেন কিন্তু নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অডিটর যোগদান করবেন ১১তম গ্রেডে, যেখানে একই অর্গানোগ্রামে একই পদে ১০ম গ্রেডের কর্মচারী বিদ্যমান, যা সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের ব্যত্যয়। ফলাফল, চাকরির শুরুতেই মামলা পরিচালনায় জড়িয়ে নিম্ন আদালত উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, প্রশাসনিক শুদ্ধতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় যা কারোরই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট কোনো বিষয়ে রায় প্রদান করলে অনুরূপ ক্ষেত্রে উক্ত রায় বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তৎপ্রেক্ষিতে সিএজি কার্যালয়ের পত্রে নং ৫৬৫, তারিখ ১২/০৮/২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে ২৩/১২/২০১৮খ্রি. তারিখ হতে অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করনে। অর্থ বিভাগ পত্রের সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে আইনি মতামত জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করলে আইন মন্ত্রণালয় পত্র নং ৭৮ তারিখ ২০/০৮/২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে মতামত প্রদান করে। আইন মন্ত্রণালয়ের পত্রের আলোকে অর্থ বিভাগ, প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ প্রশাসন-২ শাখা ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্র নং ৩৫৫, তারিখ: ২৫/০৮/২০২৪ খ্রি. এ অতিরিক্ত সচিব ব্যয় ব্যবস্থাপনা শাখায় প্রেরণ করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে এবং নিশ্চয় সম্যক অবগত হয়েই অর্থ বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়েছেন। সুতরাং অর্থ বিভাগের এখন বাস্তবায়নের পক্ষ্যে কোন জটিলতা নেই বলেই প্রতীয়মান হয়।
আইনের মতামত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি বিষয় সামনে আনা হচ্ছে, তাহলো অডিটর পদে সরকারের অন্যান্য বিভাগে যারা কর্মরত তারাও একই দাবি করতে পারে। বিষয়টি যদিও বিবেচ্য হওয়ার কথা নয় (আদালতের সিদ্ধান্ত এবং আইনের মতামতের কারণে) কারণ, অন্য বিভাগে ১১তম গ্রেডের কোন অডিটর নেই এবং আদালতের রায় সুষ্পষ্টভাবে অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের জন্য। অতীতের অনেক বিভাগের ১১তম গ্রেডের নিচেরও অনেক পদ দ্বিতীয় শ্রেণী এমনকি কোন ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে, তখন নিশ্চয় এসব বাধা হয়নি আর না হওয়াটাই যৌক্তিক। অডিটর পদের সমস্কেলে থাকা সাব-রেজিষ্টার বর্তমানে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা, উপজেলা সমবায় অফিসার, খাদ্য পরির্দশক, কানুনগো, সিনিয়র স্টাফ নার্স, কাস্টমস ইন্সপেক্টর পদসমূহ ২য় শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। অডিটরের নিচের স্কেলে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ATEO, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশের এসআই, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা’র পদ সমূহও বর্তমানে ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা। সেখানে একজন অডিটর যিনি সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মূল ভূমিকা পালন করেন তার পদবী ৩য় শ্রেণীতে।
আমাদের চাওয়া শুধুমাত্র একটি মীমাংসিত সিন্ধান্তের বাস্তবায়ন। অডিটর পদ ১০ম গ্রেডে আইনি সকল কার্যক্রমন সম্পন্ন হয়ে বাস্তবায়নের অপেক্ষাধীন। এমন একটি সমাধানযোগ্য বিষয় যা অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের বড় উৎকণ্ঠা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রের এই কঠিন সময়ে কোন দাবি নিয়ে কথা বলছি না, আমরা বলছি আমাদের প্রতিষ্ঠিত অধিকারের বাস্তবায়ন। আমরা সরকারের অনুগত কর্মচরীর হয়ে সরকারের জন্য বিব্রতকর হয় এমন কাজ করিনি, করবো না।