গত ৬ আগস্ট থেকে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত ১৩২টি স্থানে সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও প্রায় ১ হাজার পরিবার নিরব চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন’ শিরোনামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়। পাশাপাশি গত ৬ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৩২টি স্থানে সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও প্রায় ১ হাজার পরিবার নিরব চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব শত্রুতা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধও রয়েছে।’ এই সময়ে সারা দেশে ৪৩টি মন্দির ভাঙচুর হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের আমলে সবশেষ জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মাত্র ৭ মাসেই ১১৭ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, যশোরের অভয়নগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ফটিকছড়ি, খুলনার শিয়ালী, রংপুরের পীরগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চৌমুহনী, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত শত মঠ মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করা হয়েছে। কিন্তু সেসব ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার সরকার করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের ভিকটিম বানিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছে।’
বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত শোষিত মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘১৯৪৭ সালে ৩৩ শতাংশ হিন্দু এ দেশে ছিল; যা আজ মাত্র ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নিজ স্বার্থে হিন্দু সমাজকে ভিকটিম বানিয়ে হাজার হাজার হিন্দু বাড়ি-ঘর মঠ-মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে ভীতির সঞ্চার করে হাজার হাজার হিন্দুকে পরিকল্পিতভাবে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে।
এই বিষয়ে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এই দুই দাবি বাস্তবায়িত হলে কোনও দলই আর হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। নির্বাচন বা সরকারের পালাবদলে হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতিত হবে না। কেউ আর হিন্দু সম্প্রদায়কে ভিকটিম বানিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না।
এসময় অবিলম্বে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান তারা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির সরকারি খরচে পুনর্নির্মাণের দাবি জানান।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাড. দীনবন্ধু রায়, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণভট্টাচার্য, নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার পাল, সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, যুগ্ম মহাসচিব নকুল কুমার মন্ডল, সুমন কুমার শীল প্রমুখ।