প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির আম্পায়ার তালিকায় এলিট প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। তার এমন অর্জনে খুশি বিসিবিসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। সৈকত নিজেও খুশি এই অর্জনে।
তিনি বলছেন, গত বছরের নভেম্বরে শেষ হওয়া বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স করার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। আর বাংলাদেশের ম্যাচে দায়িত্ব পালনের সময় সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন।
এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়া সৈকত বলেন, আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়া বড় সম্মানের। দেশের প্রথম হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় এটা আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে। আমার ওপর যে আস্থা দেখানো হয়েছে তার প্রতিদান দিতে মুখিয়ে আছি।
বিসিবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভালো আম্পায়ারিং করে মুগ্ধ করতে পেরেছিলাম, একটা ভাবমূর্তি গড়তে পেরেছিলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে গিয়েও নার্ভাস ছিলাম না। আমার মনে হয় সেটিরই পুরস্কার আজকের এই অর্জন।
আম্পায়ার সৈকতের মতে, বাংলাদেশের ম্যাচে আম্পায়ারিং করা সবচেয়ে চাপের। তিনি বলেন, আমরা তো ক্রিকেটপাগল জাতি। সেজন্য সবাই চায় আমাদের দলটাই জিতুক। দিনশেষে আমরাও চাই দেশ জিতুক। এই দলের হয়ে একসময় খেলেছি, নিজের দেশ খেলছে, জিতলে আনন্দ লাগে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে- যখন মাঠে যাই তখন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হয়। অনেকে হয়তো অন্যভাবে বিচার করতে পারে। এটিই আম্পায়ারদের জীবন, পেশারই অংশ।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের অভিষেক হয় সৈকতের। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেছেন, সম্ভবত ওইদিন ৮ জানুয়ারি ছিল। মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করি। ওই ম্যাচে আমার সাথে ছিল আইসিসির তখনকার সেরা আম্পায়ার সাইমন টাফেল। আম্পায়ার হিসেবে মাঠে নামার পর দেখি পেস বোলাররা খুবই জোরে বল করছে। ঘরোয়া ম্যাচে যখন ছিলাম, তখন এত গতির বল ফেস করিনি। সেজন্য ওইদিন গতির বলগুলো অ্যাডজাস্ট করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল।
বিসিবিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ঘরোয়া লিগে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেকের স্মৃতিও তুলে ধরেছেন সৈকত। বলেন, ধানমন্ডির ৮ নম্বর মাঠে তৃতীয় বিভাগের বাছাইপর্বের একটা ম্যাচ করতে যাই। তখন তো অতটা নিয়মকানুন জেনে আসিনি আম্পায়ারিং করতে। জানতাম না কোন জুতা পরতে হয়। ফরমাল জুতা পরে গিয়েছিলাম। দেখে একজন স্কোরার বলল, ‘সৈকত ভাই, এই জুতাতে তো আম্পায়ারিং করে না।’ এরপর একটা বলে ওয়াইড ও বাই হয়েছিল। আমি ওয়াইডের সঙ্কেত দিলাম, বাইও দিলাম। আসলে তো ওয়াইড হলে বাইয়ের সঙ্কেত দিতে হয় না। সেখান থেকে শুরু। এরপর অনেক অভিজ্ঞতা হল।
শুধু নিজের অভিজ্ঞতাই নয়, খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে আম্পায়ারিংয়ে আসার গল্পও শুনিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। বলেন, ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে দলের সাথে ছিলাম, যদিও সেবার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারিনি। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে বাংলাদেশ। এরপর বিশ্বকাপ দলে আমার থাকা হয়নি। তখনই খেলার বাইরে ভেবেছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম- কোচিং করবো। যদিও এটি ছিল ফিজিক্যাল জব। এরপর ভাবলাম চাকরি করতে হবে। পরে ভাবলাম বাংলাদেশ কোনো একদিন টেস্ট মর্যাদা পাবে, তখন হয়তো টেস্টে আম্পায়ারিং করতে পারবো কিংবা বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করতে পারবো। ওই চিন্তা থেকেই আম্পায়ারিংয়ে আসা।
সৈকতের মতে পড়ালেখা করলে এই পেশায় কাজ করা কিছুটা সহজ। তিনি আম্পায়ারিং বিষয়ে বেশ পড়াশোনাও করেছেন। তবে এই বাইরেও একাডেমিক পড়াশোনাও ভালো করেছেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা সৈকত পরে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন।