বাংলা সংবাদ মাধ্যম

২০২৫ সালের বিধিমালাকে “কালো আইন” আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

২০২৫ সালের বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার মাধ্যমে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উপর এক নতুন ও শৃঙ্খল চাপানো হয়েছে যা বিশেষ করে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিবে এবং এই আইন কেবল ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা ও সংগঠন ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করছে না, বরং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের আওতাকে সংকুচিত করছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। ২০২৫ সালের বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালাকে “কালো আইন” আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ‘এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’।

সোমবার ( ২ জুন ) সকালে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে বক্তারা ঘোষণা দেন— এই আইন অবিলম্বে সংশোধন না হলে, এফবিসিসিআই ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোঃ জালালউদ্দীন, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক ও সহ সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নিজামউদ্দীন রাজেশ, আবু মোতালেব, খন্দকার রহুল আমিন, শফিকুল ইসলাম ভরসা প্রমুখ।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২৫ সালের নতুন বিধিমালা হচ্ছে ব্যবসায়ী সমাজের উপর এক নতুন শৃঙ্খল। এটি পরিকল্পিতভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করছে। একটি ব্যক্তি দুই মেয়াদ পরিচালক থাকলে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাকে এক মেয়াদ বিরতিতে যেতে হবে—এ বিধান ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী নির্বাচিত নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করা হয়েছে, যা অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে অযোগ্য করছে।

মোঃ জালালউদ্দীন বলেন, এবারের নির্বাচনে ডিবিসি অডিট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংগঠনগুলোর জন্য মারাত্মক আর্থিক চাপ তৈরি করছে। আমরা পূর্বের ন্যায় সাধারণ অডিট রিপোর্ট কার্যকর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বাড়তি ফি ও শর্তগুলো মূলত বড় কর্পোরেটদের জন্য নয়, বরং গলাকাটা শর্ত আরোপ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পথ বন্ধ করার মতলবে করা হয়েছে।এই আইন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার পুনরুদ্ধারের ডাক দেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, সহায়ক কমিটির সদস্যরা দিনের পর দিন এফবিসিসিআই ভবনে ঘোরাফেরা করছেন, অথচ বাস্তব ব্যবসায়ীদের কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা দেখছি, এফবিসিসিআই এখন একটি ক্লাবঘরে পরিণত হয়েছে।

নেতারা আরও বলেন, অলাভজনক সংগঠন গুলোকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) ও ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (BIN) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। পাঁচশর কম সদস্য সংখ্যার সংগঠনগুলোর শ্রেণি অবনমন করে ভোটাধিকার হ্রাস করা হচ্ছে। প্রতিটি সদস্যের TIN ও BIN বাধ্যতামূলক করায় অনেক সাধারণ উদ্যোক্তা বাদ পড়বেন। ওয়েবসাইট না থাকলে সংগঠনের স্বীকৃতি বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত ও আর্থিক কারণে অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

এ ছাড়া বক্তারা অভিযোগ করেন, সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ ও বার্ষিক চাঁদায় যে হারে বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে, তা “অস্বাভাবিক ও অমানবিক”। তারা জানান, সাধারণ সদস্য ফি ৮৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণির এসোসিয়েশনের বার্ষিক চাঁদা ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাফে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সদস্যপদের নিবন্ধন ফিও ৬২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই কালো আইন প্রণয়নে এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক ও সহায়ক কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করে আইন পাশ করিয়েছে। অথচ তাদের অনেকেই ব্যবসায়ী নন এবং এমনকি এফবিসিসিআই-এর বৈধ সদস্যও নন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নতুন বিধিমালার মাধ্যমে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের অস্তিত্বে মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছে। এ আইন ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন দুর্বল করার চক্রান্ত করছে

মানববন্ধনে ‘এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’ এর নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.