বাংলা সংবাদ মাধ্যম

স্থানীয় মোটরসাইকেল শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ

নিউজ ডেস্ক:
স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদন ও মোটরসাইকেল খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ২০১০ সাল থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন মনে করছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে মোটরসাইকেল শিল্পে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি পুনর্বহালের আবেদন করে মোটরসাইকেল ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর প্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিনশনে তা পুনর্বহাল করার পক্ষে মত দেয়।

এক্ষেত্রে ট্যারিফ কমিনশনের মতামত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে ২০২০ সালের ‘প্রোডাক্ট অব ইয়ার’ ঘোষণা করেছেন। মোটরসাইকেল লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংভুক্ত একটি পণ্য। তাই এ শিল্পকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ‘মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা, ২০১৮’ প্রকাশ করেছে। নীতিমালার লক্ষ্য হলো- স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের উৎপাদন ২০২১ সালের মধ্যে নূন্যতম ৫ লাখ ইউনিট এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখ ইউনিট এ উন্নীত করা হবে। নীতিমালায় প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মানসম্মত মোটরসাইকেল সরবরাহ, মোটরসাইকেল শিল্প থেকে জিডিপির অবদান ২০২৫ সালের মধ্যে ০.৫% হতে ২.৫% এ উন্নীতকরণ, ২০২৭ সালের মধ্যে নূন্যতম ৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদনপূর্বক আমদানি ব্যয় হ্রাসকরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান ৫ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ২০২৭ সালের মধ্যে ১৫ লাখে উন্নীত করা কথা বলা হয়েছে।

এ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ওই নীতিমালার কয়েকটি অনুচ্ছেদে স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। সে বিবেচনায় বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সরকার এসআরও জারির মাধ্যমে শুল্ক, ভ্যাট ও কর অব্যাহতি প্রদান করে আসছে। ট্যারিফ কমিনশন বলছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউন এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতায় দেশের শিল্পখাত কিছুটা সমস্যায় পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের স্বার্থে, এপিআই, ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদন, ফ্রিজ, এসি, ক¤েপ্রসর, লিফট ও মোবাইল উৎপাদনের ন্যায় স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনেও মূসক অব্যাহতি সুবিধা আরও কিছুদিন বহাল রাখা প্রয়োজন। অন্যদিকে স্থানীয় বিনিয়োগের বিষয় বিবেচনায় এনে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রতীয়মান। বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গণপরিবহন এই ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম মাধ্যম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাই গণপরিবহণের বিকল্প দ্রুতগামী ও নিরাপদ যানবাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের ব্যবহার হতে পারে বলে উল্লেখ করে কমিশন। ট্যারিফ কমিশন আরও বলেছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোটরসাইকেল এখন সার্কভুক্ত ভুটান, নেপালসহ অন্যান্য দেশে রফতানি হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোটরসাইকেল রফতানি হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ২৪৩ মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৫ মোটরসাইকেল ডলারের রফতানি হয়েছিল। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১০ ডলার সমপরিমাণ মোটরসাইকেল রফতানি হয়েছিল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.