রাঁচি টেস্টের তৃতীয় দিন ব্যাটারদের জন্য টিকে থাকা যে বেশ কঠিন হবে, সেটা বেশ অনুমেয় ছিল। কিন্তু এ দিন ব্যাট হাতে দারুণ লড়াই করেন ধ্রুব জুরেল। সেঞ্চুরি না পেলেও তার ৯০ রানেই ৩০৭ রান তোলে ভারত। জবাবে ৪৬ রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে দিশাহারা হয়ে যায় ইংলিশ ব্যাটাররা। তারা দু’জন ৯ উইকেট নিলে ১৪৫ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ফলে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯২ রান। ছোটো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে তৃতীয় দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ৪০ রান। জয়ের জন্য ১৫২ রান প্রয়োজন স্বাগতিকদের।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাঁচির জেএসসিএ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে বড় লিড পাওয়ার আশায় ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সফরকারীদের সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেন ধ্রুব জুরেল। ৩০ রান নিয়ে দিন শুরু করা এই কিপার-ব্যাটার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগান; শেষ পর্যন্ত অবশ্য থামেন ৯০ রানে, ১৪৯ বলের ইনিংসে মারেন ৪ ছক্কা ও ৬টি চার।
৭ উইকেটে ২১৯ রান নিয়ে এদিন খেলতে নামা ভারত জুরেলের ইনিংসের সুবাদে পার করে তিনশ। তাকে দারুণ সঙ্গ দেয়া কুলদিপ ২৮ রানে আউট হলে ভাঙে ৭৬ রানের জুটি। ৯৬ বলে প্রথম টেস্ট ফিফটি করা জুরেল এরপর এগিয়ে যান অভিষিক্ত আকাশ দিপকে নিয়ে। তাদের ৪০ রানের জুটিতে ৩১ রানই ছিল দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা জুরেলের। আকাশকে ফিরিয়ে রেহান আহমেদের পর ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন আগের দিন চারটি উইকেট নেয়া শোয়েব বাশির।
সেঞ্চুরি যখন দৃষ্টি সীমানায় তখনই টম হার্টলির ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান জুরেল। তাতে ইংল্যান্ডের ৩৫৩ রানের জবাবে ৩০৭ রান করতে পেরেছে দলটি। তিন অঙ্ক না ছোঁয়ার হতাশা থাকলেও চমৎকার ইনিংসটির জন্য প্রশংসায় ভাসেন তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে বশির নেন ৫ উইকেট। ৩ উইকেট পান হার্টিলি ও অ্যান্ডারসন নিয়েছেন দু’টি।
লিড পেয়েও দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি ইংলিশদের। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে শুরু থেকেই দিশাহারা হয়ে উঠে দলোটি টপ অর্ডার ব্যাটাররা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন এই অশ্বিন। প্রথমে ১৫ রান করা বেন ডাকেটকে শিকার করেন তিনি। পরের বলে ওলি পোপকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললে দলীয় ১৯ রানেই দুই টপ অর্ডারকে হারায় সফরকারীরা। এরপর জো রুটকে নিয়ে ৪৬ রানেই জুটি গড়েন ওপেনার জ্যাক ক্রলি। তবে রুটকে ১১ রানে এলবিডব্লিউ করে দেন অশ্বিন। রিভিউ নিয়ে মূল্যবান উইকেটটি পায় ভারত।
একপ্রান্তে নিজের মতো খেলে যাওয়া ক্রলি ৭১ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। কুলদিপের বল ব্যাকফুটে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন ৭ চারে ৬০ রান করা ইংলিশ ওপেনার। ভারতীয় রিস্ট স্পিনার কয়েক ওভার পর ভেঙে দেন বেন স্টোকসের স্টাম্পও। ৫ উইকেটে ১২০ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে ইংল্যান্ড। বিরতির পর জাদেজার করা প্রথম বলেই শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচ দেন সিরিজজুড়ে ছন্দ খুঁজে ফেরা জনি বেয়ারস্টো। ইংলিশ এই ডানহাতি ব্যাটার করেন ৩০ রান। এরপর হার্টলি ও প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা অলিভার রবিনসনকে বিদায় করেন কুলদিপ।
বাশিরকে নিয়ে শেষ দিকে বেন ফোকস ১৩ ওভার কাটিয়ে দিলেও তেমন রান তুলতে পারেননি। একই ওভারে তাকে ও জেমস অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন অশ্বিন। তাতে ১৪৫ রানেই ইংল্যান্ডকে বেঁধে ফেলে স্বাগতিকরা। ভারতের হয়ে অশ্বিন ৫টি ও কুলদীপ নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা পান ১টি উইকেট ।
ছোটো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিনের শেষদিকে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েই খেলেছেন ভারতের ওপেনাররা। দিনশেষে ইয়াশাসবি জয়সওয়াল ১৬ ও রোহিত শর্মা ২৪ রান করে অপরাজিত আছেন। ম্যাচের চতুর্থ দিন ১০ উইকেট হাতে নিয়ে নামবে ভারত। যেখানে তাদের শেষ দুদিনে তুলতে হবে ১৫২ রান। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ইতোমধ্যে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে ভারত। এই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমেই সিরিজ নিশ্চিত করার সুযোগ থাকছে রোহিতের দলের।