বাংলা সংবাদ মাধ্যম

করোনা থেকে নজর সরাতে ভারতবিরোধী প্রচারণায় মত্ত পাকিস্তান

নিউজ ডেস্ক:
গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধান থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমা সত্তে¡ও এখনো ভারতবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। মার্কিন দ্বিমাসিক পত্রিকা ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ এর একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (এইআই) বিশেষজ্ঞ মাইকেল রুবিন ব্যাখ্যা করেন কীভাবে করোনা ভাইরাস সংকট এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকারের ব্যর্থতা থেকে পাকিস্তানিদের মনোযোগ সরাতে গণমাধ্যমকে কাশ্মীরের বর্ণনা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

এমনকি কাশ্মির ইস্যু উত্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানকে তিরস্কার করলেও বিষয়টি নিয়ে তর্ক অব্যাহত রেখেছে পাকিস্তান। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানি সাংবাদিকরা যদি কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের সরকারের নির্ধারিত ভাষা ব্যবহার না করেন, তাদের চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। তারা কাশ্মীরে ভারতের কার্যক্রমকে ‘লকডাউন’ না লিখে ‘জাতিগত বৈষম্য’ এবং ‘সামরিক অবরোধ’ লিখতে বাধ্য হন। রুবিন বলেন, ‘তবে খানের কোনো কথাই পাকিস্তানের সন্ত্রাস সমস্যা, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ, তা থেকে মনোযোগ সরাতে পারা উচিত নয়। ফাইন্যানসিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) পাকিস্তানের সন্ত্রাস সমস্যা নিয়ে কথা বলা শুরু করে। ২০১৯ সালের জুনে সংস্থাটি পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কালো’ তালিকায় না রেখে কূটনৈতিক সদ্ভাব বজায় রাখতে ‘ধূসর’ তালিকায় রেখেছিল।

’ সম্প্রতি পাকিস্তানি সিনেট পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে এফএটিএফের উদ্বেগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দু’টি সংস্কার পাস করেছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এবং আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা আন্তরিক হলেও এ ধরনের সংস্কার প্রকাশ্যে বিবেচনা করার বিষয়টি এ সরকারের জন্য বেশ বিতর্কিত। লেখক উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানি কূটনীতিকরা দাবি করেন, দেশটি জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে; অথচ সন্ত্রাসবাদে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গভীর মনোযোগী ইসলামাবাদ।

রুবিনা বলেন, ‘পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা মাসুদ আজহারের অবস্থান সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের অজ্ঞতা এটিই প্রমাণ করে। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সাবেক মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান, যিনি দেশটিতে রক্তক্ষয়ী এক সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী, যিনি কারাগার থেকে ‘পালিয়ে’ গেছেন এবং এখন পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের সুরক্ষায় রয়েছেন, তার কাহিনীও একই ইঙ্গিত দেয়। এক দশকেরও বেশি সময় আগে মুম্বাইয়ে হামলা চালানো লস্কর-ই-তৈয়বার সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে ইমরান খান সরকার এ বছরের অক্টোবরে সম্মেলনের আগে এফএটিএফের প্রতিশ্রুতি পূরণে বিলম্ব বা ত্রাণ নেওয়ার অজুহাত হিসেবে কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করছে। রুবিন পাকিস্তানের গিলগাইটিস, পশতুন, সিন্ধু এবং বেলুচদের নিয়মিত লক্ষ্যবস্তু করা এবং উইগুর মুসলমানদের চীনের বন্দিশিবিরে রাখায় সমর্থন দেওয়ার পর পাকিস্তানের ধর্মীয় স্বাধীনতায় শ্রদ্ধার দাবি ইমরান খানের ‘ভণ্ডামি’ প্রকাশ করে।ধর্মীয় স্বাধীনতায় অন্যান্যের শ্রদ্ধা আছে কিনা, তা নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনা অযৌক্তিক।

এদিকে, ২০১৯ সালে পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা লাইন অব কন্ট্রোল ভঙ্গ করেছে ১৩৫ বার। এর মধ্যে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের আগে ৫৭ বার এবং ৫ আগস্টের পর ৭৮ বার।

অন্যদিকে এ বছর এখন পর্যন্ত ৩৩ বার তা হয়েছে, যা আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী দলে নিয়োগও কমেছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের আগে ১৭২ জন অঞ্চলটির সন্ত্রাসী দলে যোগ দিয়েছিল। এ বছর যোগ দিয়েছে ১০০ জন, যা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর সন্ত্রাসী নিয়োগ কমবে ১০ শতাংশেরও বেশি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.