বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। একবার ১৯৭৫ সালে বাকশাল করেছিল, এখন আবার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন থাকলেই তো বিরোধী দল আসবে, কিন্তু সেই নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার মাধ্যমে তারা আবারও বাকশাল কায়েম করেছে।
রোববার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়ায় জেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি শুধু বিএনপির জন্য নয়। গোটা দেশ ও জাতি আজ বিপদের সম্মুখীন। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। যেন আমরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি। অথচ আজ ৫৩ বছর পরে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা কায়েম করতে পারিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ৬০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার। দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। তাদের অপরাধ এরা বিরোধী দল করে। অপরাধ, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এভাবে আওয়ামী লীগ পুলিশকে ব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করার ব্যবস্থা করেছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া দল হয়ে গেছে। এখন তারা রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে দল চালায়। ২৪ সালে তামাশার একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছে।
দিন দিন আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনীতিবিদরা বারবার বলছে মেগা প্রজেক্ট দিয়ে মেগা দুর্নীতি বন্ধ করুন। না হলে এই দেশ আর টিকবে না।
নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও ১১ বার জেলে গিয়েছি। মামলা হয়েছে ১১১টি। তাই আমাদের সবাইকে বুকে সাহস নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী সরকার সেটিরও অনুমতি দেয় না। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম তৈমুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে ফখরুল বলেন, এই প্রথম রুহিয়াতে আমি একটি সভা করছি, যে সবাই তৈমুর সাহেব উপস্থিত নাই। দীর্ঘ ৩২ বছর তার সঙ্গে আমার পথ চলা। রুহিয়ার প্রতিটি মানুষ জানে এই এলাকার উন্নয়নের তৈমুর সাহেবের স্পর্শ ছিল। দলীয় পদ অনেকে পেয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়, কিন্তু জনগণের ভালোবাসা খুব কম লোক পায়। প্রয়াত তৈমুর সাহেব ছিলেন জনগণের ভালোবাসার একজন প্রাণ প্রিয় নেতা। এই মানুষটি সারা জীবন দলের জন্য কাজ করে গেছেন। পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তিনি ছিলেন সর্বজনীন নেতা এবং সাধারণ মানুষের নেতা। তিনি বিএনপির সভাপতি থাকাকালীন গোটা জেলার দলকে সংগঠিত করেছিলেন। প্রয়াত তৈবুর রহমানকে হারিয়ে আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপির বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।