ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দিনের প্রথম ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ১ রানে হারিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন কারান শর্মা এবং বল হাতে আসেন মিচেল স্টার্ক। অজি এই পেসারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান কারান, পরের বলে ডট। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা ছক্কা হাঁকিয়ে জয়ের সহজ সমীকরণ করে ফেলেন কারান শর্মা। তবে পঞ্চম বলে কারানকে সাজঘরে ফেরান স্টার্ক। শেষ বলে বেঙ্গালুরুর দরকার ছিল ৩ রান, লকি ফার্গুসন ২ রান নিতে গিয়ে রান আউটের ফাঁদে পড়লে ১ রানের জয় তুলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স।
রোববার (২১ এপ্রিল) ইডেন গার্ডেন্সে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শ্রেয়াসের ফিফটি ও ফিল সল্টের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২২২ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। লক্ষ্য তাড়ায় উইল জ্যাকস ও রজত পাতিদারের জোড়া ফিফটির পরেও শেষ ওভারের রোমাঞ্চকর ম্যাচে ২২১ রানে থামে বেঙ্গালুরু। এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো কলকাতা। অন্যদিকে, টানা ৬ষ্ঠ হারে পয়েন্ট তালিকার তলানিতেই থাকলো বেঙ্গালুরু।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী ভঙ্গিমায় আবির্ভূত হন কলকাতার দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও সুনিল নারিন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দলীয় ৫৬ ও ব্যক্তিগত ৪৮ রানে আউট হন সল্ট। মোহাম্মদ সিরাজের বলে পাতিদারের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সল্ট আউট হবার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার নারিনও। মাত্র ১০ রান করেই বিদায় নেন তিনি। ঈয়াশ দয়ালের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নারিন।
এরপর রাঘুবংশী ফেরেন ৩ রানে। ইয়াশের বলে ক্যামেরুল গ্রিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে সাময়িক বিপাকে পড়ে কলকাতা। ভেঙ্কটেশ করেন ১৬ রান। এরপর রিংকু সিংকে সাথে নিয়ে ৪০ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস। রিঙ্কু সিং আউট হলে রাসেল-আইয়ারের ৪২ ও রাসেল-রমনদ্বীপের ৪৩ রানের দুটি জুটি কলকাতার রানকে দুইশতে পৌঁছে দেয়।
রাসেলের ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান ও রমনদ্বীপ মাত্র ৯ বলে খেলেন ঝড়ো ২৪ রানের ইনিংস। দু’জনই থাকেন অপরাজিত। বেঙ্গালুরুর পক্ষে দুটি করে উইকেট তুলে নেন দয়াল ও গ্রিন। এছাড়া একটি করে উইকেট পান সিরাজ ও ফার্গুসন।
২২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভিরাট কোহলির ৭ বলে ১৮ রানের ইনিংসে শুরুটা ঝোড়ো হয় বেঙ্গালুরুর। কোহলির আউট নিয়ে অবশ্য তৈরি হয় বিতর্ক। হারশিত রানার ফুল টসে ভড়কে গিয়ে লিডিং এজে ফিরতি ক্যাচ দেন ক্রিজের বাইরে থাকা কোহলি, অন ফিল্ড আম্পায়ার নো বল না দিলে সেটি রিভিউ করেন কোহলি। নতুন পদ্ধতিতে বল ট্র্যাকিংয়ে বলের অনুমিত গতিপথের সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যাটারের পা থেকে কোমর উচ্চতার পার্থক্য মেপে নির্ধারণ করা হচ্ছে নো বল। সে অনুযায়ী, কোহলির কোমরের (১.০২ মিটার) চেয়ে বলের (০.৯২) উচ্চতা ছিল কমই।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডু প্লেসিস। ভরুণ চক্রবর্তির বলে আউট হন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। ৩৫ রানে ২ উইকেট হারানো বেঙ্গালুরু অবশ্য শক্ত একটা ভিত পায় উইল জ্যাকস ও রজত পাতিদারের জোড়া ফিফটি এবং দু’জনের ৪৮ বলে ১০২ রানের জুটিতে। ৩২ বলে ৫৫ রান করা জ্যাকসের পর ২৩ বলে ৫২ রান করা পাতিদারকে একই ওভারে ফেরান রাসেল, ব্যাটিংয়ে তেমন সুবিধার দিন না কাটালেও বোলিংয়ে ঠিকই প্রভাব রাখেন এই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার।
মাঝের ওভারে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও বেঙ্গালুরুর আশা হয়ে ছিলেন দিনেশ কার্তিক। সমীকরণটা কঠিন হয়ে উঠছিল, শেষ দিকে সিঙ্গেলও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাসেলের স্লো বাউন্সারে আগে থেকেই স্কুপ করতে উদ্যত কার্তিক ক্যাচ তুলে থামেন ১৯তম ওভারের শেষ বলে, বেঙ্গালুরুর তখনো দরকার ২১ রান। এ উইকেটে গতি কমিয়ে আনা বল কার্যকর হলেও স্টার্ক শেষ ওভারে তেমন কিছু করেননি শুরুতে, তার খেসারতও দিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য হাঁপ ছেড়েই বাঁচেন আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়।