নিজস্ব প্রতিবেদক:
জনসংযোগ কর্মকর্তা পদায়ন নিয়ে পিআইডি ও বেতারের কর্মকর্তাদের সুপ্রাচীন যুদ্ধ সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে চরম আকার ধারন করেছে। অতি সম্প্রতি দেশের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি অর্ডারে সকল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সংযুক্তি বাতিল করে নিজ দপ্তরে ফেরত পাঠায়। তখন সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করলে জানা যায়, মাননীয় উপদেষ্টাদের দপ্তর বন্টনের পরে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী জনসংযোগ কর্মকর্তাদের পুনরায় পদায়ন করা হবে। তবে, এই সময়টাকে ঘোলপানি বিবেচনা করে মাছ শিকারের বিষয়টি তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হাত ছাড়া করতে চায় না। তারা একাট্টা হয়ে বেতারের কর্মকর্তাদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। মিথ্যা সংবাদ লিখে সাংবাদিকদের হোয়াটসএপ ও ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে দিয়ে রিকোয়েস্ট করতে থাকে। যেহেতু তথ্য অধিদপ্তর সাংবাদিকদের সচিবালয় প্রবেশের কার্ড প্রদান করে, এটাকেও তারা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। তাদের এই ঘৃণ্য কর্মের মধ্যে রয়েছে বেতারের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নামে মিথ্যা কাল্পনিক সংবাদ তৈরী করা, ফেসবুকে শেয়ার করা, সরকারী গোপন নথি শাখা থেকে কৌশলে চুরি করে ফেসবুকে প্রকাশ করা। এমনি তারা ছাত্রদের নাম করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হোয়াটসএপেও পাঠাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তারা নিজ নামের ফেসবুক আইডি থেকে এধরনের প্রচারণা করতে দ্বিধাবোধ করেনা।
বেতারের এক জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশের এ প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদেরকে সংবাদ লিখে দিয়ে হোয়াটসএপ ও ম্যাসেঞ্জারে সেন্ড করে বিভিন্নভাবে রিকোয়েস্ট এবং মিস গাইড করে প্রকাশ করতে বাধ্য করছে। কারো কারো নামে মিথ্যা বানোয়াট এবং কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে নিউজ করাচ্ছে। আমরা কয়েজনের কাছ থেকে এধরনের মেসেজ ও লিখে দেওয়া নিউজ দেখতে পেরেছি। কয়েকজনের নামও আমরা পেয়েছি যে কারা এসব করছে। এমনকি সরকারের তথ্য ক্যাডার থেকে উপসচিব হয়ে যাওয়ার পরেও তারা এই ঘৃণ্য কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোন কোনো জেলা তথ্য অফিসারও নিজেদের আইডি থেকে শেয়ার দিচ্ছে। কতটা ঘৃণ্য মন মানসিকতার হলে একজন বিসিএস ক্যাডার এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে কল্পনা করা যায় না। আমরা এদের চিহ্ণিত করে রাখছি এবং আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বরাবর এই সকল কর্মকান্ডের প্রিন্ট আউটসহ তাঁদের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ জানানো হবে। পিআইডির অভিযোগ বেতারের কর্মকর্তারা পাঁছ ছয় বছর একই মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, গত সরকারের মন্ত্রীদের সাথে তারা কাজ করেছে। পশ্ন হচ্ছে গত সরকারের সময় তাদের যে সকল জনসংযোগ কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছিল তারা তাহলে কোন সরকারের সাথে কাজ করতো? নাকি তাঁদের পদায়ন ছিল না। যে ৪২ জনের অর্ডার হয়েছে এদের মধ্যেওতা মাত্র ১৪ জন বেতারের বাকি সবতো পিআইডির। পিআইডির এমন জনসংযোগ কর্মকর্তাও আছে ১৫/২০ বছর একই মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছে। তাদের অনেকেই অবৈধ আয়ের দায়ে অভিযুক্ত। সাম্প্রতিক বেতারের কর্মকর্তাদের পুন:পদায়ন নিয়ে তারা অভিযোগ করছে। কিন্তু খোজ নিয়ে দেখা গেছে বেতারের কর্মকার্তাদের পূর্বেই এবং অর্ডারের দুইদিন পর থেকেই তথ্য অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রনালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রনালয়ে পূর্বের জনসংযোগ কর্মকর্তাই পুনরায় পদায়িত হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের কোন কথা নেই।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জনসংযোগ কর্মকর্তা বা পিআরও পদটি বিসিএস (তথ্য) সাধারণ ক্যাডারের পদ। বিসিএস ক্যাডার মুলত জেনারেল বা সাধারণ ক্যাডার ও টেকনিক্যাল ক্যাডার ভাগে বিভক্ত। তথ্য ক্যাডারেরও একটি টেকনিক্যাল ক্যাডার রয়েছে যারা বেতারের ইঞ্জিনিয়ার। আর বিসিএস তথ্যের জেনারেল বা সাধারণের তিনটি অংশ। একটা হল তথ্য অফিসার, আরেকটি হল অনুষ্ঠান ও অপরটি হল বার্তা। এই জেনারেলের তিনটা ভাগ থেকেই তারা পাবলিক রিলেশনের কাজ করে বা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পিআরও হিসাবে পদায়ন পায়। জনসংযোগ কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়ে তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বেতারের অনুষ্ঠান ও বার্তার কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ বিদ্যমান। তথ্য অধিদপ্তর সবসময় তারা মিনিষ্ট্রিয়াল প্রচারনার কাজ করে দাবী করে এই পদগুলো তাদের নিজস্ব পদ বলে আসছে। তবে বেতারও মিনিষ্ট্রিয়াল প্রচারনার কাজেই জড়িত। পূর্বেও তাদের মধ্যে এই নিয়ে কয়েক দফা ঝামেলা হয়েছে এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এগুলো সমাধান করেছে। বেতারের কর্মকর্তাদের এই বৈষম্য বিরোধী সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা পিআইডির বৈষম্যমূলক চক্রান্ত যাতে বাস্তবায়িত না হয়, সেই বিষয়টি শক্ত হাতে দমন করা।
তথ্য অধিদপ্তরে এক কর্মকর্তা বলেন, সকল মন্ত্রণালয়ে পিআরও দেয়ার মতো যথেষ্ট অফিসার আমাদের আছে এবং আমাদের অর্গানোগ্রামেও উল্লেখ আছে। অরগানোগ্রামে সংশ্লিষ্ট শাখার নাম মিনিস্ট্রিয়াল পাবলিসিটি। বেতারের যারা কাজ করে তারা মিনিস্ট্রিয়াল পাবলিসিটি না। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের তথ্য সাধারণ ক্যাডারের পদ দখল করে আছে। তাই এখন সুযোগ হয়েছে আমারাও সোচ্চার, তাদেরকে বিতাড়িত করা হবে।